কেঁচো সার উৎপাদন করে স্বাবলম্বী নওগাঁর রাণী-নগরের কুজাইল গ্রামের মহিলারা

স্টাফ রিপোর্টার, নওগাঁঃ

নওগাঁর রাণীনগর উপজেলা কাশিমপুর ইউনিয়নের একটি আদর্শগ্রাম কুজাইল। বর্তমানে এই গ্রাম কম্পোস্ট সারের গ্রাম নামে পরিচিত। মেরুদন্ডহীনপ্রাণী কেঁচো আজ এই গ্রামের কয়েকজন মহিলার মেরুদন্ড সোজা করতে সহযোগিতাকরছে। সংসারের পাশাপাশি কম্পোষ্ট সার উৎপাদন করে আজ নিজেরাই আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বীকুজাইল গ্রামের মহিলা সিআইজি (সবজি) সমবায় সমিতির মহিলারা।স্বামীর পাশাপাশি কেঁচো দিয়ে কম্পোস্ট সার উৎপাদন ও বাজারজাত করে সংসারে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করছেন এই সমিতির মহিলারা। প্রতি মাসে কম্পোষ্ট সার উৎপাদনকারখানা থেকে প্রায় ২ হাজার কেজির বেশি উন্নত মানের কেচো কম্পোষ্ট সার উৎপাদিতহচ্ছে। খরচ বাদে মাসিক আয় প্রায় ১৫ হাজার টাকা। উৎপাদিত কম্পোস্ট সার চলে যাচ্ছে দেশেরবিভিন্ন জেলায়। উন্নত মানের এই কম্পোষ্ট সার নিজেদের সবজি ক্ষেতে ব্যবহার করাসহগ্রামের অন্যান্য কৃষকরা এই সমিতির কাছ থেকে কম্পোস্ট জৈব সার কিনে তাদের ক্ষেতেব্যবহার করছেন। এতে করে এই এলাকায় দিন দিন ফসলের ক্ষেতে রাসায়নিক সার ব্যবহারের প্রবনতাকমছে আর পরিবেশ বান্ধব কেঁচো সার ব্যবহারের প্রবনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।সমিতির দলনেত্রী সানজিদা আক্তার বলেন, আমি গ্রামের কয়েকজন মহিলাদের নিয়ে দলীয় ভাবেআমাদের পরিত্যক্ত জমিতে সবজি চাষ করতাম। সবজি ক্ষেত থেকে বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন করারউপায় জানতে কৃষি অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তখন কৃষি অফিস ভার্মি কম্পোস্টউৎপাদন এবং মাটির উত্তম স্বাস্থ্য ব্যবস্থাúনা নামের এক প্রযুক্তির আওতায় কেঁচো লালন-পালন,গোবর সংগ্রহ, হাউজ বা চাড়িতে দেওয়া, কম্পোষ্ট সার তৈরির পর সেগুলো সংগ্রহ করা, সারপ্যাকেজিং এবং বাজারজাতকরন করাসহ নানা বিষয়ে আমাদের প্রশিক্ষণ প্রদান করে। বর্তমানেআমাদের কারখানায় ১০টি বড় হাউজ রয়েছে। এছাড়াও শতাধিক মাটির চাড়িতে এই কম্পোষ্টসার উৎপাদন করছি আমরা। আমাদের দেখাদেখি গ্রামের অধিকাংশ মহিলারা এই কম্পোস্ট সারউৎপাদন করছে। বর্তমানে আমাদের এই গ্রাম কম্পোস্ট সারের গ্রাম নামে পরিচিত। আমাদেরএই উৎপাদিত সার আমরা নিজেদের সবজি বাগানে ব্যবহার করে বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন করছি।নিজেদের প্রয়োজন মিটিয়ে বিষমুক্ত সবজি বাজারে বিক্রি করছি। আমরা প্রতি মাসে২০০০ কেজি কম্পোস্ট সার উৎপাদন করছি। প্রতি কেজি সার ১৫ টাকা কেজিতে বিক্রিকরছি। এছাড়াও আমরা ৫ কেজি কিংবা ১০ কেজির প্যাকেট তৈরি করে কুরিয়ার সার্ভিসেরমাধ্যমে ক্রেতাদের কাছে সরবরাহ করে থাকি।তিনি আরো জানান, বর্তমানে আমাদের গ্রামের কৃষকরা ফসলের ক্ষেতে রাসায়নিক সার তেমনব্যবহার করছেন না। কৃষকরা কেঁচো সারের উপকারিতা সম্পর্কে জেনে গেছেন। এতে করেসবজি ও ফসল উৎপাদনে খরচ যেমন কমছে অপরদিকে ভোক্তারা বিষমুক্ত সবজি খাচ্ছেন। সরকারেরসার্বিক সহযোগিতা পেলে আমাদের এই কারখানাটি আরো অনেক বড় করার ইচ্ছে রয়েছে।যেখানে আরো মহিলারা কাজ করবেন আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি সম্পর্কে জানবেন এবং বাস্তবজীবনে প্রয়োগ করে আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী হবেন এবং স্বামীর পাশাপাশি সংসারেওভ’মিকা রাখবেন।উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শহীদুল ইসলাম জানান, কৃষি অফিস মহিলাদের এইধরনের উদ্যোগে যাবতীয় উপকরন, প্রশিক্ষণ ও কেঁচো দিয়ে পরিবেশ বান্ধব কম্পোস্ট সারউৎপাদনে সার্বিক সহযোগিতা করে আসছে। তাদের পাশাপাশি ওই গ্রামের অনেকেই এইসার উৎপাদন করতে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। নিজের সংসারের কাজের অবসর সময়ে তারা এই সার উৎপাদনকরে আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন এবং নিজেরাই এই সার সবজি ক্ষেতে ব্যবহার করে বিষমুক্তসবজি উৎপাদন করছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে একটি প্রদর্শনী প্লট, ১০কেজি কেঁচো এবং পাকা ১০টি চেম্বার তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। এই গ্রামের মতো যদিপুরো উপজেলার কৃষকরা এই ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন ও ব্যবহার করেন তাহলে দেশ নিরাপদ খাদ্যউৎপাদনে আরো এগিয়ে যাবে। আমরা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে উপজেলার কৃষকদেররাসায়নিক সার ব্যবহার না করে জৈব সার ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করে আসছি। আমরা আশা রাখি একসময় এই উপজেলা কম্পোস্ট সার উৎপাদনে দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হবে।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment